July 13, 2025, 9:28 pm
রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ এক দশক আগে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফল জালিয়াতির অভিযোগে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা রাখী চক্রবর্তীকে সরকারি চাকরি থেকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন।
তিনি জানান, রাখী চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় মামলা চলছিল। পাশাপাশি দুদকের দায়ের করা একটি মামলাও আদালতে বিচারাধীন। গত ২ জুলাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত ও শৃঙ্খলা শাখা থেকে তার বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়, যা ৮ জুলাই রাজশাহীতে এসে পৌঁছায়।
আদেশে বলা হয়েছে, বিভাগীয় মামলায় তার বিরুদ্ধে আনা অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার সাময়িক বরখাস্তের আগের আদেশও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
গোদাগাড়ী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ২০১৭ ইং সালের ১১ নভেম্বর প্রেফতার হন রাখি চক্রবর্তী। পরদিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ১২ নভেম্বর রোববার বিকেলে তাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। এর আগে সকালে রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন রাখি চক্রবর্তী। এ সময় বিচারক আকতার উল আলম তার আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ৪০ শিক্ষার্থীর নম্বর বাড়িয়ে বৃত্তি পাইয়ে দেন কর্মকর্তারা। বিষয়টি ফাঁস হলে বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে অভিভাবক মহল। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গত ২১ আগস্ট দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক তরুণ কান্তি ঘোষ নগরীর রাজপাড়ায় থানায় মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই গ্রেফতার হন মামলার প্রধান আসামি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেম। খবর পেয়ে আত্মগোপন করেন মামলার অন্য দুই আসামি তৎকালীন বোয়ালিয়া প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রাখী চক্রবর্তী ও কম্পিউটার অপারেটর সোনিয়া খাতুন।
আত্মগোপনে থেকে গত ২৩ আগস্ট উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন রাখী চক্রবর্তী। ২০১৬ সালে রাখী চক্রবর্তীকে গোদাগাড়ী উপজেলায় শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। উচ্চ আদালতের জামিন শেষে রোববার আদালতে হাজির হন তিনি। ওই মামলায় গত ১১ সেপ্টেম্বর আবুল কাশেম জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এর আগে বৃত্তি জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। সত্যতা পাওয়ায় ওই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।
তাদের মধ্যে রাখী চক্রবর্তীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত, তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো (পরে পুনর্বহাল হলেও আবার অবসর) এবং কর্মচারী সোনিয়া রওশনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
ঘটনার পর আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, জালিয়াতির মাধ্যমে বৃত্তি পাওয়া ৪০ শিক্ষার্থীর বৃত্তি বাতিল হয়। এর মধ্যে ৩০ জন ট্যালেন্টপুল এবং ১০ জন সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছিলেন।
সংশোধিত ফলে রাজশাহী নগরীর শিমুল মেমোরিয়াল নর্থ সাউথ স্কুলের ১৫ শিক্ষার্থীর বৃত্তিও বাতিল করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই বিদ্যালয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সন্তানরা পড়াশোনা করত। বৃত্তির অর্থ ট্রেজারির মাধ্যমে সরকারকে ফেরত দিতে বলা হয়।
বিষয়টি নিয়ে রাখী চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি শুধু বলেন, ‘এ বিষয়ে এখন কথা বলতে ইচ্ছুক নই।’
গোদাগাড়ী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ( ভারপ্রাপ্ত) আল মামুন বলেন,
রাখী চক্রবর্তীর ম্যাডামের নামে ২ টি মামলা হয়। ১ টি মামলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) করেন। এ মামলাটি চলমান রয়েছে। তাকে হাজিরা দিতে হয়। তার বিরুদ্ধে যে বিভাগীয় মামলা হয়েছে ছিল ওই মামলায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। বিভিন্ন সময় তদন্ত করে সত্যতা প্রমানিত হওয়ায় পিএসসি’র অনুমতি নিয়ে সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহার করে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানান এক কর্মকর্তা।
মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী